প্রশ্নঃ স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, স্মৃতিস্মম্ভ, মূর্তি-প্রতিকৃতি, নেতৃবৃন্দের মাজারে পুস্পস্তবক অর্পণ, এক মিনিট নীরবতা পালন ইত্যাদি পালন করা কি জায়েজ?
উত্তরঃ নাজায়েজ।
উত্তরঃ নাজায়েজ।
(ক) পুস্পস্তবক অর্পণঃ যারা শহীদ হয়েছেন, ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মা আল্লাহর কাছে পুষ্পপল্লবে ঘেরা ঘন সবুজ শ্যামল বৃক্ষলতায় পরিপূর্ণ সুরভিত জান্নাতে বিচরণ করছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “শহীদগণের রূহ আল্লাহর সান্নিধ্যে সবুজ পাখিদের মধ্যে থাকবে এবং জান্নাতের বাগ-বাগিচা ও নহরসমূহে ভ্রমণ করবে”। [সহীহ মুসলিম]রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, “মুমিনের আত্মা একটি পাখি হিসেবে জান্নাতের বৃক্ষরাজিতে বিচরণ করতে থাকবে। আল্লাহ যেদিন তাকে পুনুরুত্থিত করবেন সেদিন তার দেহে আত্মাটি ফিরিয়ে দেয়া পর্যন্ত এভাবেই থাকবে”। [আহমাদ, হাসান]
অপর একটি বর্ণনায়, “শহীদ্গণের আত্মার প্রতি আল্লাহ দৃষ্টি দিবেন এবং বলবেন তোমরা কি কিছু কামনা করছ? তাঁরা বলবেন, আমরা আর কি কামনা করব ! আমরা তো যেখানে ইচ্ছা সেখানে বিচরণ করছি”। [মুসলিম]
শহীদগণ যেখানে আল্লাহর কাছেই কিছু কামনা করছে না, সেখানে কি তারা আমাদের এসব মূল্যহীন পুষ্পস্তবকের জন্যে অপেক্ষা করছে?
শহীদ ও মৃত ব্যক্তিদের জন্যে অন্তরে বাস্তব দরদ থাকলে, তাদের ত্যাগ তীতিক্ষার বিনময়ে কিছু দেওয়ার মনোবৃত্তি থাকলে সে পথটি খুঁজতে হবে, যে পথে কিছু করলে তারা পরকালে উপকৃত হবেন। সে পথটি হল আল্লাহর অনুমোদিত পথ। শহীদ ও মৃতদের জন্যে তাদের নিয়ত করে তাদের উদ্দেশ্যে কেউ যদি দান খয়রাত করেন, তাদের উদ্দেশ্যে, তাদের পক্ষ হয়ে জনকল্যাণমূলক কাজ করেন তাহলে এর বিনিময়ে তারা শত কোটি পুষ্প অফুরন্ত নেয়ামত, ফুলে ফলে ভরা উদ্যানের মালিক হতে পারেন আল্লাহর কাছে। আর এটাই হল তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমাদের আমলগুলো তোমাদের মৃত নিকটাত্মীয় ও তোমাদের সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে তাদের কবরে পেশ করা হয়। আমলগুলো ভাল হলে তারা আনন্দিত হয় আর অন্য কিছু হলে তারা বলে হে আল্লাহ তাদেরকে তোমার আনুগত্যের আমল করার এলহাম কর”।[আবু দাউদ, তাবারানী,আহমাদ]
বুঝা গেল, শহীদ ও মৃতদেরকে তারাই আনন্দিত ও উপকৃত করে যারা তাদের জন্যে দুয়া ও দান খয়রাত করে। পুস্পস্তবক অর্পণকারীদের এই কর্মে তারা কবরে দুঃখ অনুভব করেন। আমাদের দেশে যা করা হয় এতে মনে হয় শহীদগণ শহীদ হয়ে যেন অপরাধ করে গেছেন। তাদের নামে এমন সব কর্মকাণ্ড করা হয় যা তাদের ত্যাগ তীতিক্ষার প্রতি উপহাসের শামিল। ইট, সিমেন্ট,রড দিয়ে কিছু একটা বানিয়ে সেখানে কিছু ফুল রেখে আসলে তা কি শহীদগণ পেলেন নাকি ঐ ইট, সিমেন্ট, রডগুলোকেই দেয়া হল সেই ফুলের সওগাত?
কাদের থেকে শিখেছি এই পুস্পস্তবক অর্পণ?
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনীত দীনে পুস্পস্তবক অর্পণের কোন বিধান নেই। মৃতদের জন্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ খ্রিস্টান জাতির সংস্কৃতি। হিন্দু ধর্মেও মূর্তিকে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। শুধু পুস্পস্তবক অর্পণ নয় মিষ্টি, সন্দেশ, দুধ কলার স্তবকও অর্পণ করা হয় দেবভোগ হিসেবে। আল কুর’আনে ইবরাহীম আলাইহি সালামের ঘটনা বর্ণণা প্রসংগে বলা হয়েছে- “অতঃপর সে তাদের দেবালয়ে, গিয়ে ঢুকল এবং বললঃ তোমরা খাচ্ছ না কেন? তোমাদের কি হল যে, কথা বলছ না?” [সূরা সাফফাত ৯১-৯২]
(খ) এক মিনিট নীরবতা পালনঃ এটা হারাম।
কায়েস ইবনু আবী হাযেম বলেন, “আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু (হজের মওসুমে) যায়নাব নামক আহমাস গোত্রীয় এক মহিলার নিকট গেলেন। তিনি দেখলেন, সে কথা বলে না। তিনি বললেন, সে কথা বলে না কেন? লোকেরা বলল- তার হজটি এমন যাতে সে নীরবতা পালন করছে। আবু বকর তাকে বললেন,তুমি কথা বল। তোমার এ নীরবতা পালন অবৈধ। এটি জাহেলিয়াতের (শিরক ও অজ্ঞতা) যুগের কাজ। অতঃপর সে মহিলাটি কথা বলল। [বুখারী]
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা আল্লাহর জন্যে নীরবতা পালন কর”।
অপর এক হাদীসে হক ও সত্য থেকে নীরবতা পালনকারীকে বোবা শয়তান বলা হয়েছে। মৃতদের জন্যে দুয়া করা একটি হক ও সত্য দ্বীনি বিধান। তা না করে যারা নীরব থাকে তারা উক্ত হাদীস অনুযায়ী বোবা শয়তান।আল্লাহ তো বোবা হতে কাউকে নির্দেশ দেননি। তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে মুখ খুলে দু’আ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
মূলঃ তাওহীদ জিজ্ঞাসা জবাব (১)
কাজী মুহাম্মাদ ইবরাহীম
প্রধান মুহাদ্দিস, জামিয়া কাসেমিয়া নরসিংদী